ভিয়েতনাম যুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধ

Blog Article

ভিয়েতনাম যুদ্ধ: ইতিহাস, কারণ এবং ফলাফল

ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৫-১৯৭৫) ছিল ২০শ শতকের অন্যতম দীর্ঘ এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। এটি মূলত দক্ষিণ ও উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে সংঘটিত হলেও, এর পেছনে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা কাজ করেছিল, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধকালীন বিরোধ।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পটভূমি

ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন: ১৮৮০-এর দশকে ফ্রান্স ভিয়েতনাম দখল করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর: জাপান দখল করে, কিন্তু যুদ্ধের শেষে ফ্রান্স আবার দখল নিতে চায়।

হো চি মিনের নেতৃত্ব: ১৯৪৫ সালে হো চি মিন ভিয়েত মিন দলের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

ফরাসি-ভিয়েত মিন যুদ্ধ (১৯৪৬-৫৪): দীন বিয়েন ফু-তে ফরাসি পরাজয়ের পর, দেশটি উত্তর এবং দক্ষিণে বিভক্ত হয়।

উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিভাজন

উত্তর ভিয়েতনাম: হো চি মিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকার।

দক্ষিণ ভিয়েতনাম: মার্কিন সমর্থিত গণতান্ত্রিক সরকার।

১৯৫৫ সালে যুদ্ধ শুরু হয় দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং উত্তর ভিয়েতনামের সমর্থিত ভিয়েত কং বিদ্রোহীদের মধ্যে।

যুদ্ধের কারণ

১. শীতল যুদ্ধ ও মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব

যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজমের প্রসার ঠেকাতে চেয়েছিল। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন উত্তর ভিয়েতনামকে সমর্থন করেছিল।

২. ডমিনো থিওরি

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করত, এক দেশ কমিউনিস্ট হলে, পাশের দেশগুলোও একই পথে যাবে।

৩. দক্ষিণ ভিয়েতনামে রাজনৈতিক অস্থিরতা

দক্ষিণ ভিয়েতনামের দুর্নীতিপূর্ণ এবং অজনপ্রিয় সরকার বিদ্রোহকে আরও উৎসাহিত করেছিল।

৪. ভিয়েত কং বিদ্রোহ

ভিয়েত কং গেরিলা দল দক্ষিণে যুদ্ধ শুরু করে এবং উত্তর ভিয়েতনামের সমর্থন পায়।

যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী

১. টেট আক্রমণ (১৯৬৮)

ভিয়েত কং এবং উত্তর ভিয়েতনাম দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আক্রমণ চালায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মনোবল ভেঙে দেয়।

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ

১৯৬৫ সালে মার্কিন সৈন্যরা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ শুরু করে।

নাপাম বোমা ও এজেন্ট অরেঞ্জের ব্যবহার: এর ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা যায় এবং পরিবেশ ধ্বংস হয়।

৩. প্যারিস শান্তি চুক্তি (১৯৭৩)

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

৪. সাইগনের পতন (১৯৭৫)

উত্তর ভিয়েতনাম সাইগন দখল করে এবং যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

ফলাফল

১. বিপুল প্রাণহানি ও ধ্বংস

প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে ২০ লাখ ছিল ভিয়েতনামি বেসামরিক নাগরিক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫৮ হাজার সৈন্য নিহত হয়।

২. ভিয়েতনামের একীকরণ

দক্ষিণ ভিয়েতনামকে দখল করে কমিউনিস্ট শাসনে পুরো ভিয়েতনামকে একত্র করা হয়।

৩. মার্কিন পরাজয়

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় সামরিক পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

৪. সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

ভিয়েতনামের পরিবেশ ও অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়।

যুদ্ধের পর দেশটি অর্থনৈতিক চাপে click here পড়ে এবং পুনর্গঠনে দীর্ঘ সময় লাগে।

৫. শরণার্থী সংকট

লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। এদের অনেকেই "বোট পিপল" নামে পরিচিত।

বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব

১. শীতল যুদ্ধের নতুন মাত্রা যোগ হয়।

২. যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়।

৩. ভিয়েতনাম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের মার্কিন সামরিক কৌশল পরিবর্তন করে।

উপসংহার

ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি ছিল মতাদর্শ, শক্তি এবং মানবাধিকারের লড়াই। যুদ্ধটি বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং আজও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে আলোচিত।

Report this page